এল এল.বি সমমানের "আল-ফিকহ্ ও আইন অধ্যায়ন বিভাগে আপনি কেন এ ডিপার্টমেন্টএ পড়ছেন বা এখানে পড়ে কি হতে পারবেন?
কেউ এই প্রশ্ন করলে উত্তরের বদলে, পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন এ ডিপার্টমেন্টে পড়ে কী হওয়া যাবে
না?
একজন আল-ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজের
শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ারের সুযোগ ও সম্ভাবনাসমূহ। আশা করছি এটি উক্ত বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের
একটি ক্যারিয়ার গাইডলাইন হিসেবে কাজে দেবেঃ
বাংলাদেশে আইন রিলেটেড শিক্ষার্থীদেরকে
পরিবারে ও সমাজে অবধারিতভাবে যে অনিবার্য প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয় তা হচ্ছে- 'Law পড়বি কি Liar হওয়ার জন্য ?'
অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ ধরেই নেয়- (এল
এল.বি) পড়ে ' তাঁদের ভাষায় লাইয়ার (মিথ্যাবাদি) হওয়া
ছাড়া আর বুঝি কোন গত্যন্তর নাই।আবার অনেকে বট তলার উকিল হবি বলে তাহকে, এছাড়াও ছন্দে ছন্দে উপহাস করে থাকে "যার নাই কোনো গতি,সেই পড়ে উকালতি" কিন্তু "তাঁরা আসলে 'জানেনা যে তাঁরা জানে না' " ( They don't know that
they don't know )-
আল- ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে পড়া একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার পরিধি
কতোটা বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় ! আসুন, তাহলে দেখি- ,
- ১, এখানে পড়ে কী হওয়া যাবে না?'- এটির অস্তিবাচক রূপ হচ্ছে আপনি আল-ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজ এর এল এল.বি পাশ করে আইন সংশ্লিষ্ট বা আইন বহির্ভূত সব কিছুই আপনি হতে পারবেন। 'সবকিছু' মানে আক্ষরিক অর্থেই 'সবকিছু'।
এখানে পড়ে আপনি আইনজীবী হতে না চাইলেও
আঁপনার জন্য সরকারি- বেসরকারি চাকুরির দুনিয়া খোলা। অর্থাৎ, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা যে সব চাকুরিতে
আবেদনের যোগ্য- আল-ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজ এর
একজন শিক্ষার্থী সেসব পদে অনায়াসেই আবেদন করতে পারে, প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দিতে পারে। ,
- ২, বিসিএসঃ এখান থেকে পাশ করে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের মতোই আপনারা বিসিএস এর সমস্ত ক্যাডার যেমন- ফরেন সার্ভিস, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টম, আনসার, ইত্যাদি সব নন- ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারে একজন ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন।, এছাড়াও শুধু আল-ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজ এর জন্য ২ টি শিক্ষা ক্যাডারের আসন রয়েছে
বিসিএস এর কোন নন- ট্যাকনিক্যাল ক্যাডারেই
নিয়োগ পাওয়ার জন্য অনার্স- মাস্টার্সের বিষয় আলাদা শর্ত নয়। এল এল.বি পাশ করে বিসিএস
এর বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ লাভের উদাহরণ ভুরিভুরি। ,
- ৩, সহকারী জজ/ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটঃ কিন্তু উক্ত এল এল.বি স্নাতকদের জন্য আলাদাভাবে আছে 'জুডিসিয়াল সার্ভিস' অর্থাৎ, সহকারী জজ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে 'সরকারি ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার' হওয়ার সুযোগ।
বিসিএস ক্যাডারের তুলনায় এখানে পরীক্ষার
প্রতিযোগিতা কম কিন্তু বেতন বেশি (৩০% বর্ধিত বিচারিক ভাতা) ! এই পদে নিয়োগলাভের সুযোগ
শুধুই এল এল.বি সমমানের শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। ,
- ৪, শিক্ষকতাঃ ভালো একাডেমিক ফলাফল থাকলে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও প্রায় ৫০ টির কাছাকাছি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও আইন রিলেটেড বিভাগে আইনের একজন সদ্য মাস্টার্সধারী 'লেকচারার' হিসেবে উচ্চ বেতনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়। এবং উক্ত বিভাগেও লেকচারার হিসেবে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে, এছারা ভালো ফলধারীর জন্য বিকল্প অজস্র ক্যারিয়ার সম্ভাবনার কারনে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে উপযুক্ত শিক্ষক সংকট লেগেই থাকে।
তাই একাডেমিক ফলাফল মোটামুটি ভালো হলে
এবং শিক্ষকতার ন্যূনতম ১/২ বছরের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা প্রবন্ধ থাকলে মোটা অংকের বেতনের
চাকুরির পেছনে আপনাকে দৌড়াতে হবেনা, চাকুরিই আপনাকে খুঁজে নেবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয় বরং আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন-
কোথায় ও কতো বেতনে জয়েন করবেন ! এই সেক্টরে চাহিদা এমনই বেশি যে অনার্সে ভালো ফল থাকলে
মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আইনের যোগ্য প্রার্থীকে
'অগ্রীম এপয়েন্টমেন্ট লেটার' দিয়ে বুকড করে রাখে ! বুঝেন অবস্থা ! এছাড়াও পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির 'ল অফিসার' হিসেবে যোগ দেওয়ার
সুযোগ তো বহাল আছেই ! ,
- ৫, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনীঃ একজন
আল-ফিকহ &
লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী লেফটেন্যান্ট, সাব লেফটেন্যান্ট, ফ্লাইং অফিসার হয়ে কমিশন্ড অফিসারের পদমর্যাদায় সেনা, নৌ কিংবা বিমানবাহিনীতে স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে 'জাজ এডভোকেট জেনারেল' (JAG) বিভাগে যোগ দিতে পারেন। সামরিক আইন-আদালত ও সামরিক বিচার নিয়ে এদের কাজ কর্ম।এই
সুযোগ শুধু এল.এল.বি শিক্ষার্থীদের ! ,
- ৬, ব্যাংক, বীমা, কোম্পানি, শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানঃ অনেকের ভুল ধারণা আছে ব্যাংকার হওয়ার জন্য বিবিএ, এমবিএ অত্যাবশ্যক। সত্য নয়। বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি বা অন্যান্য বিষয়ের মতো আল ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজ থেকে পাশ করেও যে কেউ ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগ দিতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে এমন ব্যাংক, বীমা, কোম্পানি, শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে ' কর্পোরেট আইন বিভাগ' নাই। এই বিভাগে ল' অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার একটাই শর্ত- এল এল.বি ডিগ্রিধারী হতে হবে।
তারমানে সাধারণ ব্যাংকিং, কোম্পানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে সাধারণ অফিসার হিসেবে আবেদনের
পাশাপাশি আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভের সুযোগ শুধু এল এল.বি ডিগ্রিধারীদের জন্যই
সংরক্ষিত ! এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের 'সহকারী পরিচালক (জেনারেল সাইড)' পদে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আবেদনের পাশাপাশি এল এল. বি ডিগ্রিধারীরা
'সহকারী পরিচালক (লিগ্যাল সাইড) পদে নিয়োগ লাভের সুযোগ পায়। এবং
এটি এল এল. বি ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত।
এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান আবার অভিজ্ঞ ও দক্ষ
প্র্যাকটিসিং লইয়ারদের কে 'প্যানেল আইনজীবী' হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও দিয়ে থাকে। এটি আইনজীবীদের জন্য
আরেকটি বাড়তি সুযোগ। ,
- ৭, ন্যাশনাল ও মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিঃ +দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, হিউম্যান রিসোর্স ইত্যাদি জেনারেল সাইডের বিভাগে অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আল- ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
ভোগ্য পণ্য কোম্পানী- ইউনিলিভার, নেসলে, সিগারেট কোম্পানি-
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জুতা কোম্পানি- বাটা, এপেক্স, স্টিল তৈরির কোম্পানি-
BSRM,
KSRM, তারকা হোটেল- রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, রূপ চর্চার বিউটি পার্লার থেকে শুরু করে গ্রামীন ফোন, এয়ারটেল ইত্যাদি মোবাইল অপারেটর পর্যন্ত প্রায় সব ন্যাশনাল কিংবা
মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতেই 'কর্পোরেট লিগ্যাল এফেয়ার্স' বিভাগ আছে। আর যেখানেই লিগ্যাল ডিভিশান সেখানেই 'এল এল.বি' ডিগ্রিধারী প্রাধান্য
পাবে।
সুতরাং আল ফিকহ & লিগ্যাল স্টাডিজ এর নামে বিভ্রান্ত না হয়ে তার কার্যক্ষমতা সম্পর্কে
জানুন ও নিজে সচেতন হউন এবং অপরকে জানতে ও সচেতন হতে উৎসাহিত করুন।
0 Comments